- March 10, 2025
- No Comment
- 8
ঢাবি শিবির সভাপতির বিরুদ্ধে ‘ধর্ষক’ ছাড়ানোর অভিযোগ ছাত্রদল সা. সম্পাদকের, নাকচ পুলিশের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্তৃক এক নারী শিক্ষার্থীকে পোশাক নিয়ে রাস্তায় হেনস্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্ররাজনীতির অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির দাবি করেছেন, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ‘ধর্ষক বা নিপীড়নকারীকে’ থানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছেন। তবে পুলিশের ভাষ্য, অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের ছাত্রনেতাদের বক্তব্য ও শিবিরের বিবৃতি সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য তুলে ধরেছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের এই অভিযোগ কি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, নাকি এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার?
জানা যায়, গত বুধবার শাহবাগ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হেনস্তা করেন মোস্তফা আসিফ নামের এক কর্মকর্তা। হেনস্তার শিকার ছাত্রী এ বিষয়ে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেন এবং পরে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। সন্ধ্যায় অভিযুক্তকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্তের পক্ষে ‘তৌহীদি জনতা’ পরিচয়ে শাহবাগ থানায় জড়ো হয় একদল সংক্ষুব্ধ জনতা। পরে সেখানে ঢাবি শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখ্য সংগঠকসহ আরও কয়েকজন ছাত্রনেতাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
সোমবার (১০ মার্চ) দেশব্যাপী নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, গত কয়েকদিন আগে নারীর প্রতি যে সহিংসতা হয়েছে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু আমরা দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সভাপতি ধর্ষক বা নারী নিপীড়নকারীকে তদবির করে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে।
তবে এ বক্তব্যকে ভুল, অপব্যাখ্যা ও মিথ্যা আখ্যায়িত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাবি শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খাঁন। সেদিন সংকটময় মুহূর্তে ছাত্রশিবিরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিরা কার্যকরী ভূমিকা রাখলেও সেদিন ছাত্রদলের নীরব ভূমিকা, গণঅভ্যুত্থানের সরকারকে সহযোগিতা করার বদলে রহস্যজনকভাবে নীরব থেকে এবং নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে থেকে ধারাবাহিক মিথ্যাচার ও উসকানিমূলক প্রচারণা যথেষ্ট সন্দেহজনক মনে করে শিবির নেতারা। মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার এবং আগামীতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এহেন বেফাঁস মন্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তারা।
যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, মূলত ঘটনার সময়ে শাহবাগ থানা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের আহ্বানে শাহবাগ থানায় সৃষ্ট পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং সেখানে অবস্থানরত ‘সংক্ষুব্ধ জনতা’র দাবি ও অবস্থান জানার জন্য শাহবাগ থানায় যায় এস এম ফরহাদ। তিনি সেখানে কাউকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে তদবির করেননি৷ বরং তিনি সেখানে উপস্থিত মবকে ‘অভিযুক্ত অর্ণবকে কোর্টে তোলা যাবে না, এখানেই মুক্তি দিতে হবে’ এই দাবি থেকে সরিয়ে এনে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বোঝাতে সক্ষম হোন৷
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী অস্থিতিশীল অবস্থা ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে শাহবাগ থানায় ঢাবি শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রমকে সহযোগিতা করেন এবং অভিযুক্তকে কোর্টে তুলতে সহযোগিতা করলেও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তার বিরুদ্ধে ‘থানা থেকে ছাড়িয়ে এনেছে’ বলে ঘৃণ্য মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছেন।
ছাত্রদল নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেই এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করে ঢাবি শিবির নেতৃবৃন্দ। ছাত্রদলের বিরুদ্ধে নারী নিপীড়ন, চাঁদাবাজি, খুন এবং দলীয় কোন্দলের অভিযোগ তুলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “রাজশাহী সিটি কলেজে ছাত্রদল নেতাদের হাতে নারী অধ্যক্ষ লাঞ্ছনার ঘটনা (১৪-০৮-২৪), গাজীপুরে ছাত্রদল সভাপতির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ (১৪-১০-২৪) এবং আরও নানা অনিয়মের মাধ্যমে ছাত্রদল নিজেদের প্রকৃত চেহারা প্রকাশ করেছে।
ছাত্রদল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অপপ্রচার করছে মন্তব্য করে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদ্দাসিসর বলেন, সেদিন শাহবাগ থানায় তৌহিদি জনতা নামে যারা মব তৈরি করেছিল আমরা গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পক্ষে তাদের বোঝাতে গিয়েছিলাম যেন তারা বিশৃঙ্খলা না করে আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই আমরা গিয়েছিলাম। শিবিরিরের সভাপতি এস এম ফরহাদও ভোর ৫ টার দিকে এসেছিলেন। তিনিও একইভাবে তাদের বুঝিয়ে চলে যাওয়ার জন্য এবং ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। কিন্তু ছাত্রদল বলছে – আমরা নাকি সেখানে আসামীকে ছাড়িয়ে আনার জন্য গিয়েছি,তদবির করেছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কেবল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে তারা এমন মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদ সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, ছাত্রদলের সেক্রেটারি নাছিরউদ্দিন ভাই ঢাবি শিবিরের সভাপতি ফরহাদ ভাইকে নিয়ে বলেছেন সে নাকি ধর্ষককে শাহবাগ থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে গেছে। এমন মিথ্যা কথা এত বড় জায়গা থেকে কিভাবে বলি আমরা? রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গিয়ে আপনি যে শাহবাগের ফাঁদে পাড়া দিচ্ছেন, খেয়াল আছে? আশা করি আপনি আপনার বক্তব্য উইথড্র করে রাজনৈতিক সততার পরিচয় দিবেন।
ছাত্রদল নেতার মন্তব্য এবং শিবির সভাপতির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, সেদিন রাতে ঐ আসামিকে ছাড়াতে ‘তৌহিদি জনতার’ একটি দল ঘেরাও করেছিল। তারা চাচ্ছিল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে। তখন আমি বিপজ্জনক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ও তাদের সাথে কথা বলার জন্য ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রনেতা এবং সাংবাদিককে আহ্বান করি। সকালে শিবির সভাপতিসহ অনেকে ছাত্রনেতা প্রশাসনকে সাহায্য করতে আসে। তাদের সহযোগিতায় আমরা আসামিকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কোর্টে চালান করতে সফল হই৷ পরে আদালত থেকে সে জামিন নিয়েছে।